Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

কৃষি তথ্য সার্ভিস

 

 ১১নং গোহট দহ্মিন ইউনিয়নের কৃষি তথ্য সার্ভিস

রহিমানগর,কচুয়া,চাঁদপুর।

Kri Cover Vadro-1424ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য শস্যবীমা

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ যার সার্বিক উন্নয়ন কৃষির ওপরই নির্ভরশীল। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশের আবহাওয়া অনবরত বদলে যাচ্ছে ফলে কৃষিক্ষেত্রে নানা রকম ফসলের সময়মতো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের কৃষির গতি ও প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে মারাত্মকভাবে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশের কৃষি প্রতিনিয়ত প্রকৃতির বৈরী পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে এগিয়ে চলছে। অসময়ে খরা, বন্যার কারণে একদিকে কৃষক হারিয়ে ফেলছে অতি মূল্যবান ফসলসহ নানা জাতের বীজ অন্যদিকে মাটি হারাচ্ছে ফসল উৎপাদনশীলতা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের কৃষি নির্ভরশীল ক্ষুদ্র খামারভিত্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলদেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন করতে হলে কৃষির এসব সমস্যা নিরূপণ করে, খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুব জরুরি। এছাড়াও কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে টেকসই কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বৈরী আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন প্রয়োজন। কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে আমরা কিছুটা সফল হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার আধুনিক প্রযুক্তির মারাত্মক অভাব এখনও রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যেমন- লবণাক্ততা, উচ্চ তাপমাত্রা, খরা কিংবা বন্যাসহিষ্ণু প্রযুক্তির অভাব লক্ষণীয় যা টেকসই কৃষি উৎপাদনের পূর্বশর্ত।
 

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীলতা ও চলমান অগ্রগতিতে কৃষি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষি ব্যবস্থার ওপর নতুন নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। দেশের প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি প্রতি বছরই খরায় আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেয়ার ফলে নদীর কাছাকাছি এলাকায় জমিতে পলি পড়ে উঁচু হয়েছে কিন্তু বাঁধের ভেতরে বেসিনের মতো নিচু হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। এরকম জলাবদ্ধ জমির পরিমাণ প্রায় এক মিলিয়ন হেক্টর। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিগত ৪০ বছরে লবণাক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ২৭% বেড়েছে। নদীর নাব্য কমে গিয়ে লবণাক্ত পানি সমুদ্র থেকে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পরছে। ফলে দেশের স্বাভাবিক কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ এক মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি। বাংলাদেশে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ৮,৩০,০০০ হেক্টর আবাদি জমির ক্ষতি করেছে। প্রায় ১ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি হাওর কিংবা বিল এলাকায় অবস্থিত এবং হাওরাঞ্চলের পানি সময়মতো বের করে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। বিগত ৩৫ বছরের মধ্যে এবছরের এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলে অকাল বন্যায় কৃষকের শত শত কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে। অসময়ে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গ্রামীণ দরিদ্র কৃষক বেঁচে থাকার অবলম্বন বোরো ধান ও সবজি তলিয়ে যাওয়ায় এখন তারা নিঃস্ব।   
 

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়াও কৃষকের ফসলের মাঠে নতুন নতুন রোগবালাইয়ের সংক্রমণে প্রতি বছর সহস্র কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে ফসলের ভয়াবহ রোগগুলোর মধ্যে গমের ব্লাস্ট রোগ অন্যতম, অনুকূল আবহাওয়ায় যা মহামারি আকারে দেখা দেয়। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম এ রোগটি ব্রাজিলে দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর অনাকাক্সিক্ষতভাবে এ রোগটি বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় এবং দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলার প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমির গম নষ্ট করে। আক্রান্ত জমিতে ৪০-৫০ ভাগ, ক্ষেত্রবিশেষে শত ভাগ ফসল নষ্ট হয়। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য গত বছর আক্রান্ত গমক্ষেতগুলো সরকারি নির্দেশনায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, এ বছর উল্লেখযোগ্য হারে গম উৎপাদন কমিয়ে আনা হয়েছে এবং বিগত বছরের তুলনায় ওই এলাকাগুলো গম চাষ প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে। এ বছর যারা গম চাষ করেছেন তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ থোড় আসার আগেই গমের গাছ কেটে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। গত বছরের গমের চাষকৃত জমিগুলো এ বছর কৃষক তামাক, মসুর ও ভুট্টা চাষ করেছেন। অতি সম্প্রতি দেশের প্রায় সব অঞ্চলে ধানের জমিগুলোতে নেক ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব কৃষিজীবী, কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে। নেক ব্লাস্টের ভয়ঙ্কর আক্রমণে ধানের দানা পুষ্ঠ হতে না পারায় শীষ সাদা ও চিটা হয়ে যাচ্ছে। তদুপরি, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফসলের বাম্পার ফলনের আশায় প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায়, কৃষক যদি কৃষি কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ফসল হারিয়ে লোকশান গুনে এবং রাষ্ট্র থেকে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা না পায় তাহলে কৃষি কাজে একসময় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এরূপভাবে কৃষকের কৃষি কাজের প্রতি অনাগ্রহ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে যা আমাদের দেশর বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, গ্রামীণ জনপদের জীবিকা ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য এক অশনিসংকেত। তাই আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি ও কৃষককে সুরক্ষা প্রদানে শস্যবীমা প্রচলন এখন সময়ের দাবি।   
 

কৃষি ও শস্যবীমা হচ্ছে কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কৃষি বীমা সুরক্ষার আওতায় থাকে কৃষক, মৎস্য চাষি, গবাদি পশুপাখি পালনকারী ও কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্য চাষি। বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশে অনেক প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরা, বন্যা, শিলাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় ঘটে থাকে যা কৃষি উৎপাদন ও কৃষকের মারাত্মক ক্ষতি করে। ফলে গোটা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। কৃষি ও শস্যবীমার মাধ্যমে কৃষি আয়ের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা এবং সব প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে কৃষি ও কৃষককে নিরাপত্তা বা সুরক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। কৃষি ও শস্যবীমা একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকে পুষিয়ে দিয়ে কৃষককে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে অপরদিকে কৃষি পণ্যের দামের পতনশীলতা থেকেও কৃষককে রক্ষা করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শস্যবীমা পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে যা কৃষি ও কৃষককে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
 

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা বিধানে দৃষ্টান্তস্বরূপ  সফলতা লাভ করেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এ সফলতার মূল ভিত্তি রচনা করেছেন এদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক। তাই কৃষিবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সবিনয় প্রস্তাব করছি আমাদের গ্রামীণ কৃষক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে কৃষি ও শস্যবীমা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ঠ বাজেটসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের  দিনবদলের অংশীদার হবেন। নতুবা  ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশাহারা কৃষক পরিবার কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি স্বনামধন্য বীমা কোম্পানি ও এনজিওগুলো কৃষক সুরক্ষায় শস্যবীমা কার্যক্রম চালুর মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কেননা কৃষি ও শস্যবীমা কৃষিতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক বৈরী প্রভাবের নির্ভশীলতার বেড়াজালে আটকে পড়া কৃষককে শুধু রক্ষাই করবে না বরং তার কৃষিকে লাভজনক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, যা দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে আরও বেশি মজবুত করবে বলেই আমার বিশ্বাস। 

 

মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী* 
*সহকারী অধ্যাপক, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ, কৃষি অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর-১৭০৬; ০১৭২৩১২৯২২৪

 

বিস্তারিত
Kri Cover Vadro-1424পেঁপে গাছের গুটি কলম

পেঁপে (Papaya) বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত পেঁপের বংশবিস্তার বীজের মাধ্যমে করা হয় কিন্তু বীজের মাধ্যমে মাতৃগাছের গুণাগুণ সমৃদ্ধ চারা পাওয়া যায় না। আবার হাইব্রিড চারা গাছের বীজ থেকেও গাছ করা যায় না। সম্পূর্ণ মাতৃগাছের গুণাগুণ সমৃদ্ধ চারা করার লক্ষ্যে পেঁপেতে গুটি কলম তৈরির জন্য চেষ্টা করে সফলতা অর্জন করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের হর্টিকালচার সেন্টার, হাটহাটজারীর উদ্যানতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ  মো. আল মামুন শিকদার। সম্প্রতি এ বিষয়ে তাঁর কার্যালয়ে বিস্তারিত আলাপকালে তিনি জানান এরই মধ্যে মাতৃগাছ থেকে ২য় কলম সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে। প্রচলিত গুটি কলমের মতো না করে একটু ভিন্নভাবে পেঁপেতে গুটি কলম করতে হয়। জনাব আল মামুন শিকদার পেঁপেতে গুটি কলম তৈরির যে ধাপগুলো অনুসরণ করেছেন তা হলো-


উপকরণ- ১. নারিকেলের ছোবড়া (রুটিং মিডিয়া); ২. প্লাস্টিক প্যাকেট; ৩. প্লাস্টিক সুতা; ৪. কাঠি/বাঁশের অংশ; ৫. পেঁপে গাছের শাখা।
 

গুটি কলম করার ধাপ
প্রথমে মাতৃগাছ নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগমুক্ত, সুমিষ্ট এবং উচ্চফলনশীল জাতের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

নির্বাচিত মাতৃগাছে অবশ্যই প্বার্শশাখা তৈরি করে নিতে হবে। গাছটির প্রধান শাখাকে কেটে দিলে অনেক পার্শ্বশাখা উৎপন্ন হবে।
 

নির্বাচিত পার্শ্বশাখার ঠিক মাঝামাঝি স্থান নির্ধারণ করা এবং নিচ থেকে ওপরের দিক বরাবর ৪৫ ডিগ্রি বাঁকা করে প্বার্শশাখার ১/৩ অংশ ধারালো চাকু দিয়ে কাটতে হবে। বাকি অংশ গাছের সাথে সংযুক্ত থাকবে।
 

চাকু দিয়ে কেটে ফেলা ১/৩ অংশকে কাঠি/বাঁশের টুকরো দিয়ে ফাঁকা করে রাখতে হবে যেন কাঁটা অংশ পুনরায় একসাথে লেগে না যায়।  
 

কাঁটা অংশটির চারদিকে খুব সাবধানে রুটিং মিডিয়াকে স্থাপন করতে হবে। রুটিং মিডিয়া হিসেবে নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার করতে হবে। রুটিং মিডিয়াটি ভালোভাবে বেঁধে

পলিথিনে মুড়িয়ে বেঁধে দিতে হবে।
 

রুটিং মিডিয়াটি যেন শুকিয়ে না যায় এজন্য মাঝে মাঝে পরিমাণমতো ছত্রাকনাশক মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করতে হবে।
 

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হলে ৩০ দিনের মধ্যে মিডিয়াতে শিকড়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে।
 

শিকড়ের রঙ গাঢ় খয়েরি হলে ধারালো ছুরি দিয়ে কাক্সিক্ষত প্বার্শশাখাটিকে শিকড়সহ কেটে ফেলতে হবে। নির্ধারিত (উঁচু ও রৌদ্রময়) জায়গায় গর্ত করে মাটি শোধনপূর্বক কলমটিকে রোপণ করতে হবে।
 

রোপণের সময় মনে রাখতে হবে যেন শাখাটিতে বেশি পাতা, ফুল বা ফল না থাকে। থাকলে সেগুলো সাবধানে কেটে ফেলতে হবে।
 

সদ্য রোপণকৃত গাছটিতে খুঁটি দেয়াসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে যাতে অতিরিক্ত বাতাস, ঝড় এবং বৃষ্টির পানি জমে চারার কোনো ক্ষতি না করতে পারে।
 

সময়মতো আগাছা পরিষ্কার, মালচিং, সার প্রদান ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
 

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পরবর্তীতে মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে ফুল আসা শুরু করে এবং কাঙ্খিত ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছের আকারও বেশ খাটো হয়।  
 

কৃষিবিদ আবু কাউসার মো. সারোয়ার*

* আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার,  কৃষি তথ্য সার্ভিস, চট্টগ্রাম

 

বিস্তারিত
Kri Cover Vadro-1424ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ একটি বিশ্লেষণ

বাংলায় মেলা সদা শতত পরিবর্তনশীল। মেলা ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনা নানা পার্বণকে ঘিরে প্রবর্তিত। কিন্তু ফল মেলা শহর গ্রামান্তরের কৃষিতে নতুন সংযোজন। কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় এটি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কৌশল সংযোজন। ফল মেলা একটি সম্প্রসারণ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি। বিশেষ ধরনের স্বরূপ, থিম ও দ্রুত বহনযোগ্য বিশেষ বার্তা। ফল চাষের কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও খাদ্য অভ্যাসে ফল আহারের অনুপ্রেরণা তাগিদ। বিশেষ করে সব পেশার মানুষের অংশগ্রহণ এবং কৃষি নির্ভর মানুষের জৈব প্রযুক্তি সংযোগ তথা দেয়া-নেয়ার সম্পর্কের বিশেষ আবহ তৈরি করে। মেলা বনে যায় চলমান কৃষি ব্যবসার প্রসার ও আয় তৈরির সোপান। বার্ষিক ফল মেলা ও ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ সফল। ফুরফুরে মেজাজে এ মেলা বার বার ফিরে আসুক কৃষকের শুভ বারতা নিয়ে।


জাতীয় ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ
গত কয়েক বছর থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সম্ভাবনায় কৃষি মেলা প্রবর্তন করা হয়।  এ সত্ত্বেও ফল বৃক্ষ রোপণের বাস্তবতা অনুধাবনে ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ পালন ও জাতীয় ফল মেলা সম্প্রসারণ পদ্ধতিকে আরও অধিকতর কার্যকর করে তুলছে। এ পক্ষ শুরু থেকেই একটি মূল সুর নিয়ে আত্ম প্রকাশ করে। ১৬-১৮ জুন ২০১৬ এর বৃক্ষ রোপণ পক্ষের প্রতিপাদ্য অর্থপুষ্টি-স্বাস্থ্য চান, ফলদ ফল বেশি খান। ২০১৫ ছিল দিন বদলের বাংলাদেশ, ফল বৃক্ষে ভরবো দেশ। এ মূল থিমগুলো বিশেষ বার্তা নিয়ে আসে যা অন্তত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। উপজেলা ইউনিয়ন গ্রাম হাটে তথা দেশ জুড়ে রঙিন পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট কলাকৌশল বিস্তারে ফল চাষিদের আনন্দে বিমোহীত করছে নতুন ফলচাষির সংখ্যা বৃদ্ধিতে দেখা দেয় নতুন অনুরণ।


পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় দেশজ ফলের অবদান সঠিক এ উপস্থাপনায় বলা হয় দেশে-৭০ প্রজাতির দেশীয় ফল বিদ্যামান। সৌভাগ্যে হলো দেশব্যাপী সবমিলিয়ে ১৩০টি ফলের চাষের তালিকা তৈরি করা হয়। দেশের চাষযোগ্য জমির ১-২% জমি ফল চাষের আওতায় রয়েছে। কিন্তু ফসলভিত্তিক মোট আয়ের শতকরা ১০% জোগায় দিয়ে থাকে ফল। ২০১০ সালে এফএওর এক তথ্য মতে, বাংলাদেশ ফল উৎপাদান সৌভাগ্যময় দেশের তালিকায় অধিভুক্ত। তথ্য মতে, দেশের ফলের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি ও হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের নিরিখে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে যা ভারত এবং চীনের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশে ১.৩৮ লাখ হেক্টের জমিতে মোট ৪৫.৮১ মেট্রিক টন ফল উৎপাদিত হয়। ফলের মোট বার্ষিক চাহিদা ৭.১ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ মোট চাহিদার ৬৪% উৎপাদিত হচ্ছে বাকি ৩৬% আমদানি করতে হয়। আমদানিকৃত ফল সহজেই চোখে পড়ে আপেল, আঙুর, আনাড়, কমলা, মাল্টা এসব। পুষ্টি প্রাপ্যতায় হিসেব মতো দৈনিক চাহিদা রয়েছে ৫৬ গ্রাম। দৈনিক মাথাপিচু ৩০-৩৫ গ্রাম ফলের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, বাংলাদেশে পুষ্টির প্রাপ্যতার সূচক সঠিক পথে এগোতে পারছে না। ইফপ্রির বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদন ২০১৪ এ শিশুদের খর্বতা, কৃশতা, অতি ওজন এবং নারীদের রক্ত স্বল্পতা হ্রাসের সূচকে  সাফল্য অর্জনে বিছিয়ে আছে। যদিও ২.৭ হারে খর্বতা কমেছে তবে ৩.৩% হারে খর্বতা হ্রাসের মাত্রা কমাতে হবে। সুতরাং পুষ্টির চাহিদা পূরণ একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন বাংলাদেশে মোট ফল উৎপাদনের ৫৪ ভাগ সরবরাহ হয় মধুমাস বলে খ্যাতি মে-আগস্ট এ চার মাসে। বাকি ২৪ ভাগ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং ২২ ভাগ সেপ্টেম্বের থেকে ডিসেম্বর মাসে। অর্থাৎ শীত ঋতুতে ফল কম উৎপন্ন হয়। তাই এ লিন পিরিয়ডে ফল উৎপাদনের অধিকতর সম্ভবনা সারা বছর ধরে ফল উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করাসহ ফলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করা দরকার।


পুষ্টির চাহিদা পূরণে দেশীয় ফল : বলা হয় ফলই বল। দেশীয় ফলের গুরুত্ব দেশে উৎপাদান সহয়ক শক্তি। শহরের ৭৩ লাখ বসতবাড়ির ছাদে ফল চাষসহ নগরীতে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান তথা ফল উৎপাদান মৌসুমে কৃষকের আর্থিক লাভও দারিদ্র্যবিমোচনের কথা বলেন। ফল উৎপাদনের ভরা মৌসুমে ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজকরণের প্রসার তথা ফল রপ্তানি প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা যায়। প্রবন্ধকার ড. রহমান ফলকে অনুপুষ্টির একমাত্র আধার বলে ব্যাখ্যা করেন। ফলের সামাজিক ও আর্থিক উপযোগিতার কথা বলেন। নার্সারিগুলোতে উন্নত মানের চারা উৎপাদন। কৃষি ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের ফল প্রক্রিয়াজাত শিল্প স্থাপনের আহ্বান জানান।


জাতীয় ফল প্রদর্শনী : ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষর বিশেষ আকর্ষণ জাতীয় ফল প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনী ১৬-১৮ জুন পার্থক্য দেশীয় ফলের পরিচয়, শনাক্তকরণ এবং এর পুষ্টিমান সম্পর্কে সব বয়সের নর-নারীসহ শিশু কিশোরের ফলের জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করছে। বিশেষ করে ঢাকাবাসী প্রকৃতির খরতাপে তিক্ত সময়ে এ মেলা বেশ পরিদর্শনে আগ্রহ লক্ষ করা যায়। এ মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল ফলসহ গবেষণালব্ধ প্রকাশ তথ্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি করে ফল বাজার সম্পসারণ করছে।


সম্ভাবনাময় বসতবাড়ি : বাংলাদেশের ১ কোটি ৫৫ লাখ বসতবাড়িতে প্রচলিত ও অপ্রচালিত ফল একযোগে ৫৩% ভাগ ফল জোগান দেয়। তবে বসতবাড়িতে ফল উৎপাদন এখনও পরিকল্পিত ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না বসতবাড়ির স্থান স্বল্পতা দিকবিবেচনা করে একই মাসে বেল উৎপাদনশীলতার লক্ষ্যে সঠিক তথ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পূর্বে গ্রামে ও শহরের বসতবাড়িতে দেশীয় ফলের গাছের সমাহার দেখা যেত। আজকাল তা আর দেখা যায় না। বসতবাড়িতে দেশীয় প্রজাতির ফল ক্রমান্বয়য়ে বিস্তার হতে যাচ্ছে। তাই বসতবাড়ির আঙিনায় ফল সবজি চাষে পুষ্টি জোগানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা যায়।
এ প্রসঙ্গে দেশীয় ফলের জিনপুল সংরক্ষেণের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। অনেক উন্নত জাত বাজারে আসলেও দেশীয় ফলের জাতসহ স্থানীয় অনেক ফলের জাত বিলুপ্তি হচ্ছে। জাতগুলো সংরক্ষণ এবং এর উন্নয়নে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় মনোনিবেশ করে তাদের সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখা দরকার।


দারিদ্র্যবিমোচনে কৃষি বিজ্ঞানী : বিজ্ঞানীদের যাচাই বাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নত জাতের ফল ও চারা বাজারজাতকরণে উৎফুল্ল হচ্ছে। অপরিচিত ফলের পরিচিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৮টি বিভিন্ন ফলের জাত অবমুক্ত করেছে। ৩২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত জার্মপ্লাজম সেন্টার বিজ্ঞানীদের গবেষণার সুযোগ তৈরি করছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট ৬৬টি জাত অবমুক্ত করেছে। বাজারে ফলের রঙের নানা বৈচিত্র্যতা লক্ষ করা যায়। শহর থেকে গ্রামের হাটে ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ীরা স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিজ্ঞনীদের অবমুক্তকৃত ফল জাতীয় ঐক্য ও সাম্যতার বার্তা নিয়ে আসছে।


খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ন্যায় ফল উৎপাদনের দিকে লক্ষ্য সম্প্রসারিত করার দিকনির্দেশনা দেন। প্রান্তিক পতিত জমি পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিজ্ঞানীরা দেশ বিদেশের সাফল্য দেখে শিখে অনুপ্রাণিত হয়ে সব উদ্যোগে দীক্ষিত হয়ে করার অনুপ্রেরণায় কথা বলেন। যেমন- বীজবিহীন লটকন, ছোট বীজের আমড়া, খরাকৃতির নারিকেল জাত উৎপাদনের কথা বলেন। পাশাপাশি ফলের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কৌশল বিস্তারের মাধ্যমে ফলের নানা সামগ্রী তৈরির প্রতি জোর দেয়। যেমন চিপস, জাম, জেলি, জুস তৈরির কথা বলেন। আগের তুলনা নতুন নতুন উদ্যোক্তারা ফল প্রক্রিয়াকরণের ব্যবসায় এগিয়ে আসছেন। কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুতসই যোগাযোগের মাধ্যমে ফল উৎপাদান ও বিপণনে যুগান্তকারী সুযোগ ও অগ্রগতি লাভ করবে।


কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নেক্সাস : এবারের ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষের একটি বিশেষ যোগসাজশ কৃষি ব্যবসার সংযোগ, সমন্বয় ও সম্প্রসারণের সমাহার। বলা হয়, বাণিজ্যের সোনা ক্ষেতের কোণা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮২৫ টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর আম রপ্তানি লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার টন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাল আমদানিতে ট্যারিফ বসিয়ে চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করছেন। অন্যদিকে চাল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করছেন। অনুরূপ বাংলাদেশ থেকে ফল রপ্তানিতে সরকারের সুযোগ-সুবিধা অধিকতর সুযোগ প্রদানের উৎসাহ ব্যক্ত করেছেন। সম্ভাবনাময় ফল কলা আর কাঁঠালের চিপস, নানা ফলের প্যাকেটজাত জুস তৈরির সম্ভাবনার কথা বলেন। তিনি বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সেতুবন্ধন তৈরির সুযোগ ও সহযোগিতা প্রদানের আশ^াস প্রদান করেন। মনিষিরা বলেন, জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হলো গাছের মতো। কৃষি তার মূল, শিল্প তার শাখা এবং বাণিজ্য তার পাতা। আজকের এ আয়োজনে অতি উচ্চমাত্রার এ প্রবাদটি ফল ও কৃষি বাণিজ্যের শাসকের কথা বলে দেয়।


ফল উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নতুন আধুনিক জাত অবমুক্ত করা। বিশেষ করে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল তৈরি করে সে অনুযায়ী নিবিড় গবেষণা হলো ফল বিস্তার করা। উন্নত কৌলিতাত্ত্বিক সমৃদ্ধ ও মান সম্মত চারা কলম উৎপাদনের মাধ্যমে ফলজ বৃক্ষের চারা সহজলভ্য করে পতিত পাহাড়ি ও বসতবাড়ির জমিতে পরিকল্পিত চারা রোপণ করা। ফল উৎপাদনের বিশেষ জোন তৈরি করা। ফলের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়া বিকাশের মাধ্যমে পোস্ট হারভেস্ট লস কমিয়ে আনা। ফল চাষে মাঝারি কৃষকের ক্ষুদ্রঋণ, মাঝারি কৃষকের মধ্যে উন্নত মানের চারা বিতরণ ও প্রণোদনা দেয়।


খাদ্য থালায় শুধু ভাত নয় এর সাথে থাকবে টাটকা দেশী ফল। বছরব্যাপী বারোমাসি ফল। ক্রমবর্ধমান মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে দেশি ফলই আশার আলো। দেশ সবজি উৎপাদন পাঁচত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়তি চাল, আলু রপ্তানি হচ্ছে। ফল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানের চেয়ে প্রাগসর। মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনেও সাফল্যের গাঁথা বিদ্যমান যা সামগ্রিক কৃষির উন্নতি সাধনের শুভসূচক। তাই বলা যায় ফল সংবেদনশীল মনে রসনা জোগায়। জাতীয় ঐক্য ও সম্যতার প্রতীক নানা জাতের ফল। তাই প্রকৃতি ও ফলের ভালোবাসায় খুঁজে ফিরুক অবহমান বাংলার ফল ধরা প্রকৃতি। জাতীয় ফলদ পণ্য ও ফল মেলা সার্থক বার বার ফিরে আসুক সুখ ও সমৃদ্ধির বারতা নিয়ে।


ড. এস এম আতিকুল্লাহ*
*এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট, জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্প, ০১৭১২৮৮৯৯২৭; mdatikullah@yahoo.com

বিস্তারিত
Kri Cover Vadro-1424ভাসমান কৃষি : ঐতিহ্য আর বহুমুখী সম্ভাবনার হাতছানি

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আমাদের রয়েছে ৪৫ লাখ হেক্টরের বেশি জলসীমা। গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলাসহ আরও অনেক জেলা বর্ষা মৌসুমে বিরাট অংশ জলাবদ্ধ থাকে। সেখানে বছরে প্রায় ৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ সময়ে সেখানে কোনো কৃষি কাজ থাকে না, ফসল হয় না, মানুষ বেকার জীবন-যাপন করেন। ওই সব এলাকায় ওই সময়ে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় ঢাকা থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই উদ্ভাবন করলেন ভাসমান কৃষি কার্যক্রম। এসব জেলার জলমগ্ন এলাকাগুলো কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় আচ্ছন্ন রয়েছে বিশেষ করে বিভিন্ন বিল, হাওর, নালা, খাল ও মজা পুকুর। সেখানে এখন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে স্তূপ করে প্রয়োজনীয় মাপের ভেলার মতো বেড তৈরি করে ভাসমান পদ্ধতিতে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মসলা উৎপাদন করছেন অনায়াসে। বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি এবং ক্ষেত্র বিশেষে আপদকালীন আমন ধানের চারা উৎপাদন সম্প্রসারণে নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং কৃষি সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আস্তে আস্তে জলাবদ্ধ এলাকায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে।
 

এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এসব বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান বেডে আমন ধানের বীজতলা করা হয়। এ যাবত অন্তত ৮০০টির বেশি ভাসমান বেডে আমন বীজতলা করা হয়েছে। ভাসমান বেডে ধানের বীজতলা করলে পানিতে ডুবে থাকা জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পরপর কিংবা ডুবো জমি জেগে উঠার পর দেরি না করে ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সী আমনের চারা মূল জমিতে লাগানো যায়। এতে সময় নষ্ট হয় না, সময়ের সাথে সমন্বয় করে আমন আবাদ করা যায়। আমন ফলনেও তেমন ব্যাঘাত ঘটে না। বৃষ্টি আর বন্যার কারণে যেখানে আমনের বীজতলা করা যায় না সেখানেও বর্ষা বা বন্যার পানি টান দিলে সময় নষ্ট না করে ভাসমান বেডে উৎপাদিত আমন ধানের চারা দিয়ে যথাসময়ে এসব জমিতে আমন আবাদ করা যায়। এতে সময় সাশ্রয় হয়, বহুমুখী লাভ হয়। এ প্রযুক্তিটি এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে কৃষি আর কৃষকের বহুমুখী লাভ হচ্ছে।
 

ভাসমান বেড তৈরির প্রধান উপকরণ কচুরিপানা। এ ছাড়া টোপাপানা, শেওলা, বিভিন্ন ধরনের জলজ আগাছা, দুলালিলতা, ধানের খড় বা ফসলের অবশিষ্টাংশ, আখের ছোবড়া, সডাস্ট ব্যবহার করে ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। পরিপক্ব গাঢ় সবুজ রঙের বড় ও লম্বা কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করলে বেডের স্থায়িত্ব বেশি হয়। যেখানে দুলালিলতা পাওয়া যায় না সেখানে দুলালিলতার পরিবর্তে পাটের তৈরি দড়ি দিয়ে বল মেডা তৈরি করা হয়। এ ছাড়া নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। ভাসমান বীজতলার ক্ষেত্রে অন্য স্বাভাবিক বীজতলার মতোই বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। এ ক্ষেত্রে এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক ভাসমান বীজতলার চারা ব্যবহার করা যায়। চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিনের হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ করা যেতে পারে। এতে ধানের চারা উৎপাদনের জন্য আর মূল জমি ব্যবহার করতে হয় না। জমি ব্যবহার সাশ্রয়ী হয়। জেগে ওঠা খালি জমিতে তাড়াতাড়ি কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এভাবে তৈরি চারা অন্যসব স্বাভাবিক চারার মতোই রোপণ করতে হবে এবং পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্য স্বাভাবিক বীজতলার চারার মতোই হবে। উৎপাদিত চারা অন্য সব স্বাভাবিক চারার  মতোই ফলন দেয়। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না, তবে মাঝে মধ্যে প্রয়োজনে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।


সাধারণত বর্ষায় বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা করার মতো জায়গা থাকে না। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির প্রয়োজনীয় সময় থাকে না। কচুরিপানা ও জলজ আগাছা দিয়ে তৈরিকৃত বেডে অনায়াসে আপদকালীন সময়ে আমনের অংকুরিত বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা যায়। তবে বীজ ছিটানোর আগে বেডের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ পুকুরের তলার কিংবা মাটির পাতলা কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার পানিতে যেন ভাসমান বেড যেন ভেসে না যায় সেজন্য ভাসমান বীজতলার বেডকে দড়ির সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হবে। ছিটানোর পর সতর্ক থাকতে হবে যেন পাখি বা অন্য কিছু  বীজগুলো নষ্ট করতে না পারে।


ভাসমান বেডে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে বলে সমতল ভূমির তুলনায় ঘন করে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা যায়। আবার ভাসমান বেডে বেশি জৈব সারের কারণে জমিতে প্রচলিত চাষের তুলনায় ফসল দ্রুত বাড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ৩-৫ গুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়। বন্যার শেষে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এসব ভাসমান বেড যখন মাটির ওপর বসে যায় তখন তা ভেঙে জমিতে বিছিয়ে বা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে সফলভাবে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়। এছাড়া, মৌসুম শেষে পচা কচুরিপানা ফল গাছের গোড়ায় সার হিসেবে ব্যবহার করে ফলের উৎপাদন বাড়ানো যায়। ফল গাছের গোড়ায় পচা কচুরিপানা ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো যায়। আমাদের দেশে চাষযোগ্য জমিতে যে পরিমাণে জৈবসার ব্যবহার করা দরকার সেভাবে দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশের নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকার কচুরিপানা ব্যবহার করে সবজি ও মসলা উৎপাদন করলে নিরাপদ সবজি ও মসলা উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি জোগানের পাশাপাশি বর্ষাকালীন আমন ধানের চারা উৎপাদনসহ পচা কচুরিপানা জমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা ও উৎপাদিকা শক্তি বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে এবং জৈবকৃষি বা পরিবেশবান্ধব কৃষি বাস্তবায়নে মাত্রিক অবদান রাখবে। জমি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া যায়। পতিত জমি ব্যবহারে সুযোগ থাকে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃষক ভাইরা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে বহুমাত্রিক কাজ করে কাক্সিক্ষত ফলন পেয়ে অধিকতর লাভবান হতে পারবেন। ভাসমান বেডে এ কার্যক্রমে সময় সাশ্রয় হবে, ফসলি জমি আগাম কাজে লাগানো যাবে, খরচও বাঁচবে, লাভ বেশি হবে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদনে আরও বেশি সম্প্রসারিত হবে।

 

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
* পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫

 

বিস্তারিত